সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মন্ত্রী ব্যর্থ: মোজাম্মেল হক চৌধুরী

Passenger Voice    |    ০৫:২৭ পিএম, ২০২৪-০৪-২০


সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মন্ত্রী ব্যর্থ: মোজাম্মেল হক চৌধুরী

বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় সড়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেও সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। যদি মন্ত্রী মনে করেন তিনি সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাহলে নিজেই পদত্যাগ করবেন বলে মন্তব্য করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, 'তিনি (ওবায়দুল কাদের) সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আছেন, উনাকেই সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি তিনি এতে ব্যর্থ হন তাহলে তারই উচিত পদত্যাগ করা।'
 
সড়কে মৃত্যুর মিছিল ও বিশৃঙ্খলায় মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করছেন কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতায় পদত্যাগের রেওয়াজ নেই। বিগত সময়ে এমন কোনো কিছু দেখাও যায়নি, নজিরও নেই। তাই আমরা পদত্যাগের দাবি করছি না, আমরা চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।’

তিনি আরও বলেন, 'জবাবদিহিতা না থাকলে তো সড়কে শৃঙ্খলা কখনোই ফিরবে না। উল্টো মন্ত্রী মহোদয় আমাদের চাপে রাখেন। আমরা তো জনগণের কথা বলছি। তাহলে আমাদের চাপে রেখে লাভটা কি? মন্ত্রীর উচিত বিআরটিএ ও পরিবহন মালিকদের চাপে রাখা। সেটা তিনি করছেন বলে আমরা মনে করছি না। না হলে সড়ক মন্ত্রী হিসেবে ২০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেও সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটি যদি মন্ত্রী মনে করেন, তিনি সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাহলে নিজেই পদত্যাগ করবেন।'

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে মন্ত্রী মহোদয়কে ১০টি চিঠি দিয়েছি সাক্ষাৎ দেয়ার জন্য। তিনি আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। অথচ পরিবহন মালিকদের সঙ্গে তিনি বৈঠকের পর বৈঠক করেন। বিআরটিএকে আস্কারা দেন। এটি ঠিক নয়।’

তিনি আরও বলেন, 'মন্ত্রী আমাদেরকে যেমন চাপে রাখছেন তেমনি বিআরটিএ কে চাপে রাখুক। বাস মালিকদের চাপে রাখুক। তাহলে সড়কে নিরাপত্তা আসতে বাধ্য হবে। অথচ ওবায়দুল কাদের দীর্ঘ ২০ বছর দায়িত্ব পালন করার পরও সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। এটি তার ব্যর্থতা।'

যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত বলে দাবি করেন মন্ত্রী, এ বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের অতিরঞ্জিত করে বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দেশের হাসপাতালগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করি। এবার আমরা ঢাকা মেডিকেলে সাড়ে ৭ হাজার। চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৫ হাজার, পিজিতে সাড়ে ৩ হাজার, খুলনা মেডিকেলে ৬ হাজারসহ এমন ৬ টি হাসপাতালে ৫৩ হাজার রোগীকে সড়ক দুর্ঘটনায় জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়ার তথ্য রেকর্ড করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি শুধুমাত্র পঙ্গু হাসপাতালেই সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০০ রোগী আহত হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছে। ঈদের এই ১৫ দিনে যদি একটি হাসপাতালে ৬০০ রোগী সড়ক দুর্ঘটনায় জরুরি বিভাগে ভর্তি হয় তাহলে কীভাবে আমরা আমাদের প্রতিবেদনে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করেছি। এর মধ্যে দেশের ১৫ হাজার হাসপাতাল রয়েছে। যেগুলোতে আমাদের যাওয়া সম্ভব হয়নি।’

দেশের সকল সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায় না মন্তব্য করে মোজাম্মেল হক বলেন, 'আমরা যে তথ্য প্রকাশ করেছি তা সংবাদ মাধ্যম ও হাসপাতালগুলো পর্যালোচনা করে করেছি। এখানেও অনেক গ্যাপ আছে। প্রকৃত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।'

এর আগে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে আহত ও নিহতের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন মোজ্জামেল হক চৌধুরী। মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এবারের ঈদ যাত্রায় বিগত ঈদের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩১.২৫ শতাংশ। এতে নিহত ২৪.০৮ শতাংশ ও আহত ১৪৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে। মোট সড়কে বিদায়ী ঈদযাত্রায় ৩৯৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ২টি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছেন।